যে কারণে বন্ধ মেট্রোরেলের এমআরটি পাস ইস্যু

0
HASNAT NAYEM; DP-217

বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত দ্রুতগতির গণপরিবহন মেট্রোরেল। যাত্রী চাহিদার শীর্ষে থাকা এই পরিবহনে ভ্রমণ করতে যাত্রীদের ব্যবহার করতে হয় বিশেষায়িত কার্ড। তিনটি কার্ডের মধ্যে একক যাত্রার কার্ড ও ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস কার্ড মেট্রোরেলের নিজস্ব। এছাড়া ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) র‌্যাপিড পাস কার্ড ব্যবহার করেও মেট্রোরেলে ভ্রমণ করা যায়।

এমআরটি পাস কার্ড নতুন করে ইস্যু করা এবং পুরোনো কার্ড রি-ইস্যু ৬ দিনের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

বিষয়টি নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে নানা উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, অতি প্রয়োজনীয় এই কার্ডের ইস্যু ও রি-ইস্যু কেন বন্ধ রাখা হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ডিটিসিএ-এর র‌্যাপিড পাস প্রকল্প থেকে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকা চলে যাওয়ায় এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে।আবার কেউ মনে করছেন, ডিটিসিএ’র কার্ড বিক্রি বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, জাইকার চলে যাওয়া না যাওয়ার সঙ্গে এমআরটি পাস ইস্যু ও রি-ইস্যু বন্ধের সম্পর্ক নেই।

গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডিএমটিসিএলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়- আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন কার্ড ইস্যু এবং পুরোনো কার্ড রি-ইস্যু করার সুবিধা বন্ধ থাকবে।

মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী আসাদ আবেদীন জয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনেছি মেট্রোরেলের এমআরটি পাস রেজিস্ট্রেশন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আমি স্টেশনগুলোতে দেখি- অনেকেই এমআরটি পাস কেনেন অফিস টাইমে ভিড় এড়ানোর জন্য। এখন যদি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়, তাহলে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়বেন।

তিনি বলেন, কিছুদিন যাবৎ একটি বিষয় আমার চোখে পড়েছে। সচিবালয়, কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১০ ও মিরপুর-১১ স্টেশনের কনকোর্স প্লাজায় ডিটিসিএ’র কার্ড বিক্রি করছে। আমি ঠিক জানি না, ডিটিসিএ’র কার্ড বিক্রি বাড়ানোর জন্য কি মেট্রোরেলের কার্ড বিক্রি সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে কি না। তবে কার্ড ইস্যু বন্ধ করাতে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে মেট্রোরেলের লাইন-৬ এর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমআরটি পাস আমাদের নিজস্ব। কিন্তু এটি ইস্যু ও রি-ইস্যুর কাজটি করা হয় ডিটিসিএ’র সার্ভারে। যদি কোনো কারণে তাদের সার্ভারে ত্রুটি হয়, তখন সেটি আর আমাদের সাপোর্ট দিতে পারে না। তখন বাধ্য হয়ে আমাদের কার্ড ইস্যু ও রি-ইস্যু করা বন্ধ করতে হয়। সার্ভারে কাজ চলছে বলে ওরা আমাদের জানিয়েছে। ফলে এটি সাময়িকভাবে বন্ধ আছে।

জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৬) অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল এন্ড টেলিকমিউনিকেশন এন্ড ট্র্যাক) মো. জাকারিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের একটি ক্লিয়ারিং হাউজ আছে, যেটি ডিটিসিএ’র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের এই কার্ডটি শুধু মেট্রোরেল না, অন্য ট্রান্সপোর্টেও ব্যবহার করা যায়। ক্লিয়ারিং হাউজের সার্ভারটি ১৪ বছরের পুরোনো। এটি এখন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ক্লাউডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটির কাজটি করেছে ডিটিসিএ। সবমিলিয়ে তারা ৭ দিন সময় চেয়েছে। কিন্তু মাইগ্রেশনের কাজটি একদিনেই হয়ে গেছে। আশা করছি, এমআরটি কার্ড ইস্যু ও রি-ইস্যু আজকেই (৩ নভেম্বর) চালু হয়ে যাওয়ার কথা। আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেব।

তৌহিদ হোসাইন তুষার নামে এক যাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেট্রোরেল প্যাসেঞ্জারর্স কমিউনিটিতে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, নতুন কেনা র‌্যাপিড পাস নিবন্ধন করতে গেলেই বিপত্তি। সবসময় বলে কার্ড নম্বর সঠিক নয়। জাইকার সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার কারণে নয় তো?

এ প্রসঙ্গে এমআরটি লাইন-৬ এর অন্য একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাইকা ফান্ডের একটি ‘ক্লিয়ারিং হাউজ’ ছিল আমাদের। সেই প্রজেক্টের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ ছিল। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, তোমরা তোমাদের মেয়াদ বাড়াও। কিন্তু তারা আর সময় বাড়ায়নি। মূল কথা হচ্ছে, তাদের চুক্তি অনুযায়ী যে সময়, সেই সময়ে তারা চলে যাচ্ছে। এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। যতদিন মেট্রোরেল থাকবে, ততদিন ক্লিয়ারিং হাউজ থাকবে। এটি আমরা নিজেরাই মেইনটেইন করতে পারব।

উল্লেখ্য, মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য এমআরটি পাস ও একক যাত্রা টিকিট সরবরাহ করে ডিএমটিসিএল। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার ঝামেলা এড়াতে নিয়মিত যাত্রীরা এমআরটি পাস কিনে থাকেন। এতে ব্যস্ত সময়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি এড়ানো যায়। এর পাশাপাশি ভাড়া ১০ শতাংশ কমে পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এমআরটি পাসধারীরা স্টেশনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর পর্যন্ত মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারেন। এমআরটি পাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যালেন্স রাখা যায়।

বর্তমানে মেট্রোরেল শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলাচল করছে। শুধুমাত্র শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলাচল করে, সকালে চলে না।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্টে’ প্রকাশিত আরও ছবিসহ মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *