রেলের নতুন ভাড়ায় অসন্তোষ, নানা প্রশ্ন যাত্রীদের

0

সব ধরনের রেয়াতি-সুবিধা (ছাড়) বাতিল করে আজ (২৪ এপ্রিল) থেকে নির্ধারিত ভাড়ায় ট্রেনের আসন বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি-সুবিধা দিয়ে আসছিল। নির্ধারিত ভাড়ায় ফিরে আসায় আসনের মূল্য বেশি দেখানোর বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে, গণমানুষের পরিবহন হিসেবে ট্রেনের রেয়াতি-সুবিধা চলমান রাখা উচিত বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

গত সোমবার (২২ এপ্রিল) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ বাতিল করা হলেও ‘দূরত্বভিত্তিক রেয়াত’ বলবৎ থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর করা হবে।

আগামী ৪ মের ট্রেনের আসন বিক্রি শুরু হয়েছে আজ (২৪ এপ্রিল) থেকে। এদিনই আসনের মূল্য পরিবর্তন হয়েছে। ফলে আজ থেকেই রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়ায় আসন বিক্রি হচ্ছে।

ট্রেনে ঢাকা-পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাতায়াত করেন নুরুদ্দীন তাসলিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের রুটে গতকালের তুলনায় ট্রেনের আসন ভেদে ১৪৫ টাকা থেকে ৩৩৯ টাকা ভাড়া বেড়েছে। রেলওয়ে বলছে এটিই অরিজিনাল ভাড়া। অরিজিনাল ভাড়া নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু একজন যাত্রী হিসেবে যেসব সুবিধা ট্রেনে পাওয়ার কথা সেগুলো যেন অবশ্যই নিশ্চিত করে রেলওয়ে, এটাই মূল কথা।

সরিষাবাড়ী-ঢাকা-সরিষাবাড়ী রুটের ট্রেনের যাত্রী জাহিদ আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব রুটের মতো আমাদের রুটেও দেখলাম অরিজিনাল ভাড়ায় ফিরেছে রেলওয়ে। কিন্তু সাড়ে চার বা পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা যে শেষ হয় সাড়ে ছয় ঘণ্টায়, সেটার হিসেব কে দেবে? আমাদের সময়ের কোনো মূল্য কী নেই? লক্কড়-ঝক্কড় কোচ দিয়ে এখনও চলছে অগ্নিবীণা ও যমুনা এক্সপ্রেস। অরিজিনাল ভাড়ায় ফেরত আসায় নতুন কোচ দেওয়া হোক, যাত্রী-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের সময়ের মূল্য দেওয়া হোক।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সেখানে ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়টি কেউ বুঝে আবার কেউ না বুঝেই মন্তব্য করছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ফ্যানস ফোরাম গ্রুপে এম রেজওয়ানুল হাসান নামের একজন লিখেছেন, ‘বেড়ে গেল রেলের ভাড়া। ঢাকা-রংপুর নির্মিতব্য ছয় লেনের মহাসড়কে স্লিপার বাসে ভাড়া ১৭০০ টাকা, অথচ রেলের এসি বার্থে ভাড়া ২২০০ টাকা। যাতায়াতে ঘোরা পথে সময় ও টাকা দুটোই বেশি লাগবে। রেলের রাজনীতির প্যাঁচে রংপুরে রেলের সুযোগ-সুবিধা এমনিতেই বাজে…, তার ওপর বাসের চেয়ে ভাড়া বেশি হওয়ায় রেলের জনপ্রিয়তা আরও কমে যাবে। রেলকে যাত্রীবিমুখ করার নতুন প্রচেষ্টা।’

অমিত চক্রবর্তী নামের একজন লিখেছেন, ‘ভাড়া বাড়াচ্ছে। কিন্তু, বিনিময়ে বৈধ যাত্রীরা কী সুবিধা পাবে, সেটিও আপনাদের স্পষ্ট করতে হবে। অবৈধ যাত্রীদের সেবা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।’

ট্রেনের ভাড়ায় রেয়াতি-সুবিধা প্রত্যাহার ঠিক হয়েছে কি না, জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেয়াতি-সুবিধা প্রত্যাহার করায় গণপরিবহন হিসেবে নামকরণের সার্থকতা এখানে নেই। গণপরিবহন হচ্ছে গণমানুষের জন্য। ইন্টারন্যাশনালি আন্তঃনগর ট্রেনে রেয়াতি-সুবিধা এখনও দেওয়া হয় যাতে দূরপাল্লার যাত্রীরা ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহী হন। সেখানে রেয়াতি-সুবিধা বাতিল করা হলো। ফলে অনেক যাত্রী ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ হারাবেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেলওয়ে আজ থেকে অরিজিনাল ভাড়ায় টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। আগে রেয়াতি-সুবিধা থাকায় যাত্রীরা ভাড়ায় কিছুটা ছাড় পেয়েছেন। এ ছাড় আর রেলওয়ে দিচ্ছে না। ফলে যাত্রীরা মনে করছেন ভাড়া বেড়েছে। আসলে কোনো ভাড়া বাড়েনি।

দূরত্বভিত্তিক রেয়াতি-সুবিধায় ৩২ বছর ধরে মূল ভাড়ায় ১০১-২৫০ কিলোমিটার ভ্রমণে ২০ শতাংশ, ২৫১-৪০০ কিলোমিটারে ২৫ শতাংশ এবং ৪০১ কিলোমিটার বা এর বেশি দূরত্বের জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর্থিক চাপ ও লোকসান কমাতে এখন এ সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকারের যাত্রীসেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি ট্রেনে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ এবং আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভ করা আসনের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে রিজারভেশন চার্জের ভিত্তিতে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ ও আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভ করা নন-এসি কোচের আসনে ব্যয় বাড়ছে মূল ভাড়ার ২০ শতাংশ এবং এসি কোচের আসনের বাড়ছে ৩০ শতাংশ।

দেখা গেছে, আগামী ৩ মে পর্যন্ত ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত একতা এক্সপ্রেস (৭০৫) ট্রেনের শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ও এসি সিট শ্রেণির আসনের ভাড়া ছিল যথাক্রমে ৫৫০, ১০৫৩ ও ১২৬০ টাকা। সব রেয়াতি-সুবিধা বাতিলের পর আগামী ৪ মে থেকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ওই একতা এক্সপ্রেস (৭০৫) ট্রেনের শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ও এসি সিট শ্রেণির আসনের ভাড়া হয়েছে যথাক্রমে ৬৯৫, ১৩৩৪ ও ১৫৯৯ টাকা।

মূলত কিলোমিটার হিসেবে এটিই রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়া। এর আগে রেয়াতি-সুবিধা থাকায় যাত্রীরা আরও কম ভাড়ায় ট্রেনে ভ্রমণ করতে পেরেছেন। সব আন্তঃনগর ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে সব শ্রেণির আসনের ভাড়া রেলওয়ে নির্ধারিত ভাড়ায় রূপান্তর হয়েছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্টে’ প্রকাশিত আরও ছবিসহ মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *