১৪ কিমি সড়কে আলপনা : চেতনার ‘আত্মতুষ্টি’ বনাম ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’!

0
HASNAT NAYEM; DP-188.1

বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার লক্ষ্যে এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা পেতে কিশোরগঞ্জে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে বৈশাখী আলপনা আঁকা হয়েছে। প্রায় দুদিনের বেশি সময় ধরে ৬৫০ জন শিল্পী রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন এ আলপনা। দেশের দীর্ঘতম এ আলপনা নিয়ে আলোচনা যেমন রয়েছে তেমনি এর বিপক্ষেও কথা বলছেন অনেকে।

বিশেষ করে পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এমন কর্মযজ্ঞে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়কে আলপনা আঁকায় ঢাকা পড়েছে সড়কের থার্মোপ্লাস্টিক রোড মার্কিং (পথ নির্দেশক চিহ্ন)। ফলে ওই সড়কে গাড়ি চালাতে চালকদের ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে। এ ছাড়া, বৃষ্টির সময় বা পানিতে সড়কটি পিচ্ছিল হতে পারে। এতে দ্রুতগতির গাড়ির চাকা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি কেমিক্যালমিশ্রিত এ রং বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস করতে পারে।

তাদের মতে, চেতনা দেখাতে গিয়ে অলওয়েদার সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে আপস করা হয়েছে। এটি দুই লেনের সড়ক। আলপনা আঁকতে গিয়ে সড়কের মাঝের বিভাজন লেন ঢাকা পড়ে গেছে। সাধারণ পিচের রাস্তায় গাড়িগুলো যেভাবে চলতে পারত, এখন কি এ রঙের ওপর দিয়ে সেভাবে চলতে পারবে— এমন প্রশ্নও রেখেছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলপনার রঙে সড়কের পথ নির্দেশক চিহ্ন ঢাকা পড়ায় গাড়ি চালাতে বিপাকে পড়বেন চালকরা। তারা এ-ও বলছেন, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের জন্য সড়কের অপারেশনাল সেফটি কম্প্রোমাইজ করা বিজ্ঞানসম্মত হয়নি।

ওই সড়কের রোড মার্কিং দ্রুত ফিরিয়ে আনা উচিত— এমনটি মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এমন সমালোচনার মুখে সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগের দাবি, “আলপনা আকার ফলে সড়কে গাড়ি চালাতে কোনো অসুবিধা হবে না।”

কিশোরগঞ্জ জেলার তিন হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দীর্ঘ ২৯.৭৩ কিলোমিটার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক তৈরি করা হয়। হাওর এলাকায় সারা বছর চলাচলের উপযোগী করে নান্দনিকভাবে তৈরি করা সড়কটি ‘অলওয়েদার সড়ক’ নামেও পরিচিত। হাওরের বিশাল জলরাশির বুক চিরে থাকা সড়কটি ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সড়কের মিঠামইনের জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার নানা রঙে আলপনা আঁকা হয়েছে।

এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগের এ আয়োজনের নাম দেওয়া হয় ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কটির দুই পাশে সাদা থার্মোপ্লাস্টিক পেইন্টের দাগ টানা আছে। এটি দিয়ে বোঝানো হয় যে ওই দাগের বাইরে গেলে গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে। সড়কের মাঝামাঝিও বিভাজন রেখা টানা ছিল। কিন্তু আলপনা আঁকার ফলে মাঝের বিভাজন রেখাটি অদৃশ্য হয়ে গেছে। এ ছাড়া, আলপনায় বিভিন্ন রঙের ব্যবহার গাড়ির চালকদের চোখে বিভ্রম তৈরি করছে।

বিষয়টি নিয়ে সাইয়েদ আবদুল্লাহ নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “‘বাঙ্গুরা’ (বাঙালিরা) কখন ও কিসে রেকর্ড গড়ে খুশি হতে চায় তা বলা মুশকিল! আচ্ছা, কেউ আমাকে একটু বুঝাবেন এখানে গর্বিত বা খুশি হওয়ার মতো কী উপলক্ষ্য আছে? আমি তো দেখতেছি কাজটা করার জন্য এই ১৪ কিমিব্যাপী সড়কে দুর্ঘটনা ঘটার চান্স বেড়ে গেল আরও। চেতনা দেখাতে গিয়ে সড়কের সেফটি ইস্যুটি কীভাবে কম্প্রোমাইজ করা হলো, জাস্ট ভাবেন একবার! এই সড়কে দুইটা লেন ছিল। আলপনা করতে গিয়ে মাঝের লেন ডিভাইডার পর্যন্ত ঢাকা পড়ে গেছে রঙে। এটা এখন অদৃশ্য! এছাড়া দীর্ঘ এই পিচের রোডের ওপর এত ঘন রঙের আলপনা করায় গাড়িগুলো নরমাল পিচের রাস্তায় যে গতিতে চলতে পারত, সেটা কি বাধাগ্রস্ত হবে না? অল্পস্বল্প রাস্তা হলে একটা কথা, পাক্কা ১৪ কিলোমিটার!”

তিনি আরও লিখেছেন, “আবার আরেকটা জিনিস ভাবেন, যিনি গাড়ি ড্রাইভ করবেন, এই বিশাল পথে চক্রাবক্রা রঙের বিরামহীন আলপনা তার দৃষ্টিকে কিছুটা হলেও কি বিভ্রান্ত করবে না? রাতের বেলা এই চক্রাবক্রা রোডের ওপর যখন হেডলাইটের আলো পড়বে, তখন সেটা কেমন বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিফলিত হবে, বুঝতে পারছেন? এগুলো কি ড্রাইভারের জন্য সমস্যা তৈরি করবে না? গিনেস রেকর্ডবুকে আলপনা এঁকে বিশ্বরেকর্ড নয় বরং ভালো একটা রাস্তাকে নিজেরা ইচ্ছা করে দুর্ঘটনাপ্রবণ বানিয়ে ফেলে গর্ব করার মত ‘বাঙ্গুগিরি’র জন্যই এদের নাম গিনেস রেকর্ডবুকে তুলে ফেলা উচিত!”

শুধু সাইয়েদ আবদুল্লাহ নয়, অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মেতেছেন। ঢাকা পোস্টের কাছে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও সুধীজন।

ঢাকা পোস্টের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয় জানান, আলপনা আঁকার কাজটি ১২ এপ্রিল বিকালে শুরু হয়। দুই দিন সারা রাত ধরে কর্তৃপক্ষ কাজটি করে। এ সড়ক দিয়ে তিনটি উপজেলাসহ আশেপাশের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। আলপনায় বাহারি রং ব্যবহারের ফলে তাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। কালো রঙের সড়কে রঙের ব্যবহার চালকদের চোখ বিভ্রান্ত করছে।

সড়কের পথ নির্দেশক মার্কিং মুছে যাওয়া এবং আলপনার বাহারি রং গাড়িচালকদের বিভ্রান্ত করবে কি না— জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আমাদের হাওরের এ সড়ক এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যাপক দুর্ঘটনা সেখানে হয়ে থাকে। অবশ্যই সড়কের মার্কিং ঠিক থাকতে হবে। সড়কের লেন মার্কিং চালকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। চালক যদি লেন মার্কিং বুঝতে না পারেন তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।”

“১৪ কিলোমিটার সড়কে আলপনা আঁকা হয়েছে। অর্থাৎ পুরো সড়কটাই সক্ষমতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এটা (আলপনা) ব্যাপক পরিমাণ ড্রাইভিং ডিস্ট্রাকশন (বিভ্রান্তি) তৈরি করবে। আন্তর্জাতিক মহলে ড্রাইভিং ডিস্ট্রাকশন একটা ভয়াবহ জিনিস। আমার কাছে মনে হয়েছে, এখানে অনেকটা জেনে-বুঝেই ড্রাইভিং ডিস্ট্রাকশন তৈরি করা হলো।”

পানিতে রং পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাইকার যারা আছেন, তারা এই সড়কে রেসিং মোডে বাইক চালান। তারা গতি মানেন না। বৃষ্টির কারণে সড়কের স্পিড রজিস্টেন্স (গতি প্রতিরোধ ক্ষমতা) কমে যাবে। ফলে সঠিক সময়, সঠিক স্থানে গাড়ি দাঁড় করানো চালকের পক্ষে সম্ভব হবে না। এখানে দুই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে, একটি হচ্ছে- নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা, আরেকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে অন্য গাড়িকে ধাক্কা দেওয়া।”

এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞের মতে, “সড়কের মার্কিংটা করা হয় ওই সড়কের দুই পাশের সীমানা বোঝানোর জন্য। লেন মার্কিংটা করা হয় আপনি ঠিক লাইনে আছেন কি না, সেটা জানার জন্য। আর রাস্তার ওপরে থাকবে বিটুমিন, যা চাকার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে সঠিক সময়ে সঠিক দূরত্বে গাড়িটি থামাবে। এই দুইটার মধ্যে যেকোনো একটার ব্যত্যয় হলে দুর্ঘটনা ঘটবে। এটা যেকোনো ধরনের যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমার জানা মতে, ওই সড়কে প্রচুর সংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলে। সেগুলোর ব্রেকিং সিস্টেম এমনিতেই বেশ দুর্বল। ওরা সাধারণত সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় গাড়ি থামাতে পারে না। পানিতে পিচ্ছিল হলে এ ধরনের যানবাহন আরও বেশি দুর্ঘটনায় পতিত হবে।”

আলপনা এঁকে সড়কের আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে— জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “ওই সড়কে যে কাজটা করা হয়েছে সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক হয়নি। রোড মার্কিংটা কিন্তু আমাদের আইনেই আছে। ওই সড়কে আলপনা আঁকায় অবশ্যই আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর কারণে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় কে নেবে?’’

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, “এগুলো কিছু লোকের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড। হাওরের ওই সড়কে এখন রোড মার্কিংগুলো নাই। সেক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় তাদের ওপরই বর্তাবে। আমার মনে হয় সরকারের পক্ষ থেকে অতি দ্রুত রোড মার্কিংগুলো রিস্টোর করা। যাতে জনগণের ও চালকদের ভোগান্তি না হয়।”

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, “যেহেতু দীর্ঘ সড়কজুড়ে রং করা হয়েছে, সেহেতু বৃষ্টির পানিতে ওই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজটি করা ঠিক হয়নি।”

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “ওই সড়কে মোটরসাইকেল বেশি চলাচল করে। বৃষ্টিতে সড়কটি যখন পিচ্ছিল হয়ে যাবে, তখন কোনো গাড়ির সামনে দিয়ে কেউ দৌড় দিলে সেই গাড়ির চালক ব্রেক করে থামাতে পারবেন না। এটি উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, রোডের মার্কিং না থাকায় রাতের বেলা চালকদের জন্য ভয়ংকর রকমের ঝুঁকি তৈরি করবে। দুর্ঘটনা ঘটবে— এটা নিশ্চিত।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ সড়ক থেকে গিয়ে গাড়ির চালকরা যখন ওই সড়কে গাড়ি চালাবেন, তখন তারা সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়বেন। কারণ, ওই সড়কে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা তো তাদের নাই। তাদের জন্য সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হবে।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, “পেইন্ট নিজেই একটা মসৃণ জিনিস। ওই রাস্তায় যেসব লাইট ভেহিকেল (হালকা যানবাহন) চলে সেগুলোর জন্য স্পিড রেজিস্ট্যান্স খুবই জরুরি। রাস্তায় যে ঢালাওভাবে পেইন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা গাড়ি অপারেশনের ঝুঁকির মাত্রা বাড়াবে। মার্কিংগুলো গ্রামার অনুযায়ী দেওয়ার কথা, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই কিন্তু রোডের মার্কিং দেওয়া হয়। রোড মার্কিংয়ের বাইরে রোডের মধ্যে অন্যকিছু আসার কথা নয়। রোড একটি পাবলিক অ্যাসেট। এটার ব্যবহারবিধি করতে হয় আন্তর্জাতিক আইন মেনে। মাঝের মার্কিংটা মুছে যাওয়ায় কনফিউশনাল স্কোপ তৈরি করবে। এটা রোড সেফটির সঙ্গে একবারে সাংঘর্ষিক।”

“হয়তো এটা নিয়ে আমরা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠাব, এক ধরনের আত্মতুষ্টি! এটা কি আমরা অর্জন করেছি নাকি ড্রাইভ দিয়ে করেছি, সেটা দেখতে হবে! প্রাইভেট স্পন্সরশিপে এ কাজগুলো করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠার কালচার ভালো নয়। বিশ্বের সামনে দেখাতে গিয়ে ১৪ কিলোমিটার সড়কে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে। এটা বাইরের (বিদেশি) লোকজন দেখার পরে বলবে, যেটা করেছে সেটা আসলে ঠিক হয়নি। রাস্তার মধ্যে অপারেশনাল সেফটি কম্প্রোমাইজ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আসলাম, আমার কাছে মনে হয়েছে এটা বিজ্ঞানসম্মত হয়নি।”

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তাদের দায় এড়াতে পারে না— জানিয়ে এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের প্রকৃত কাজগুলো করা উচিত। সেই কাজ না করে যদি আমরা রোড সেক্টর রিলেটেড কিছু প্রমোট করতাম, সেটা বেটার হতো। বিনিয়োগগুলো সুদূরপ্রসারী হওয়া উচিত। আমি কিছু একটা করতে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেললাম, আর যারা এটা করেছেন তারা কিন্তু তাদের দায় এড়াতে পারবেন না। কাজগুলো কিছু অতি উৎসাহী লোকের। আমার মনে হয় না কারও অনুমতি নিয়ে কাজটা করা হয়েছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত, যাতে সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। স্পন্সর দেওয়ার আগে সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল।”

পরিবেশ, জলবায়ু ও বায়ুর মান নিয়ে গবেষণা করেন অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “হাওরের রাস্তায় এই রঙের খেলায় নববর্ষ উদযাপন আসলে প্রকৃতি হত্যার উৎসব ছাড়া কিছু নয়। এই বিশাল পরিমাণ রঙে আছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল যেমন- বেনজেন, টলিউন ইত্যাদি। আছে ভারি ধাতু যেমন- ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি, যা দ্রুত হাওরের প্রতিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবেশবিধ্বংসী এই ধরনের কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।”

তবে, সাধারণ ও বিশেষজ্ঞদের এমন সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের রক্ষণাবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, “সড়কের ডান ও বাম পাশের কোনো মার্কিং নষ্ট হয়নি। এগুলো ঠিকই আছে। মাঝেরটাও নষ্ট হয়নি, এটা ঠিকই রিফলেক্ট করবে।”

“সড়কের মার্কিং করা হয় থার্মোপ্লাস্টিক পেইন্ট দিয়ে। এগুলো রঙের থেকে অনেক ভারি। আলপনা আকার ফলে সড়কে গাড়ি চালাতে কোনো অসুবিধা হবে না”— দাবি এ নির্বাহী প্রকৌশলীর।

প্রসঙ্গত, পয়লা বৈশাখের আগে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন জিরোপয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়কে আলপনা আঁকা হয়েছে। ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’ নামের উৎসবটি যৌথভাবে আয়োজন করে এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড।

১২ এপ্রিল ওই উৎসবের উদ্বোধন করেন এশিয়াটিক-সিক্সটির চেয়ারম্যান ও নীলফামারী-২ সদর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, বরেণ্য শিল্পী মো. মনিরুজ্জামান, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার ও ডিরেক্টর মো. মহসিন হাবিব চৌধুরী, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চিফ হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিসার মনজুলা মোরশেদ, মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব, মিঠামইন সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শরিফ কামাল ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্টে’ প্রকাশিত আরও ছবিসহ মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *