টিকিট-এনআইডি দেখিয়ে প্রবেশ করতে হবে স্টেশনে

0

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হবে ট্রেনে ঈদ যাত্রা। সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৬টায় ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ রাজশাহীর উদ্দেশে ঈদ যাত্রার প্রথম ট্রেন হিসেবে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাবে। এদিন ঢাকা থেকে ৩৭টি আন্তঃনগর ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা হবে।

এসব আন্তঃনগর ট্রেনের আসন সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৭৮টি। এছাড়া তিনটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনে আরও ৩ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। প্রথমবারের মতো এই ২৮ হাজার ৭৭৮টি টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

যারা টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা নির্বিঘ্নে ট্রেনে চড়তে পারেন এবং কেউ যেন বিনা টিকিটে প্ল্যাটফর্মে যেতে না পারে সেজন্য ঢাকা (কমলাপুর), বিমানবন্দর এবং জয়দেবপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের প্রবেশ মুখে জিগজ্যাগ তৈরি করেছে রেলওয়ে। মূলত বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব জিগজ্যাগে ৫টি করে প্রবেশপথ রয়েছে। এটি বোটলনেক সিস্টেমে (একাধিক পথ একসঙ্গে এসে মিলিত হওয়া) ৫টি থেকে ৩টি প্রবেশ পথে গিয়ে মিলেছে। এসব জিগজ্যাগের মুখেই চেক করা হবে যাত্রী ও সহযাত্রীদের টিকিট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এজন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সকল যাত্রীকে ভ্রমণকালে টিকিটসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে অনুরোধ করেছে রেলওয়ে। একইসঙ্গে সময় নিয়ে যাত্রীদের স্টেশনে আসতে বলা হয়েছে।

রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা রেল স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনের শুরুতেই বসানো হয়েছে র‌্যাব-৩, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী (আর.এন.বি) এবং পুলিশের কন্ট্রোল রুম। তারপরেই রয়েছে বাঁশের তৈরি জিগজ্যাগ। এখানেই যাত্রীদের টিকিট চেকিং করা হবে। জিগজ্যাগের ৫টি গেটের বাম পাশে রয়েছে আরও একটি পথ। যেটি দিয়ে যাত্রীরা টিকিট কাউন্টারে প্রবেশ করতে পারবেন স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য।

একই ব্যবস্থা রয়েছে বিমানবন্দর স্টেশন ও জয়দেবপুর জংশনেও।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের একটি প্রবেশ ও বের হওয়ার মূল পথ আছে। আমরা প্রবেশ পথে জিগজ্যাগ তৈরি করেছি যেন সবাই একসঙ্গে প্রবেশ করতে না পরে। বোটলনেক সিস্টেমে প্রথমে ৫টি পথ, পরে ৩টি পথ এবং সর্বশেষ একটি পথ দিয়ে যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবেন। প্রথমে যেখানে জিগজ্যাগ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে যাত্রীদের টিকিট চেকিং করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল সকাল ৬টায় প্রথম ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাবে। সারাদিন ৩৭ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। সর্বশেষ ট্রেন রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা স্টেশন ছাড়বে।

ঈদে চলবে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন

যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যেসব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ (সাপ্তাহিক ছুটি) ছিল, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব ট্রেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে প্রতিদিন চলাচল করবে। এছাড়া ঈদের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।

ঈদ স্পেশাল ট্রেনগুলোর মধ্যে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ১ ও ৩ চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ২ ও ৪ চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ৫ ও ৬ ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল ৭ ও ৮ চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; ঈদ স্পেশাল ৯ ও ১০ সিলেট-চাঁদপুর-সিলেট রুটে ঈদের আগে ৪ দিন (১৮ এপ্রিল থেকে) এবং ঈদের পরে দিন থেকে ৫ দিন (২৭ এপ্রিল পর্যন্ত) চলাচল করবে।

এছাড়া শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ১১ ও ১২ ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার; শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ১৩ ও ১৪ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধুমাত্র ঈদের দিন চলাচল করবে। ঈদ স্পেশাল ১ ও ২ বী.মু.সি.ই (পঞ্চগড়)-জয়দেবপুর-বী.মু.সি.ই; ঈদ স্পেশাল ১৫ ও ১৬ ঢাকা-চিলাহাটি-ঢাকা রুটে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল এবং ২৪-২৫ এপ্রিল চলাচল করবে।

রোববার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, দুটি ঈদে ঢাকা থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষ গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনের জন্য যাতায়াত করেন। এতে পরিবহন হিসেবে রেলওয়ের উপর চাপ তৈরি হয়। সেজন্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। এবার আমরা বড় পরিবর্তন এনেছি। যাত্রীর টিকিট সংগ্রহের বিষয়টা আমরা শতভাগ অনলাইনে করেছি। আগামীকাল থেকে আমরা বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আন্তঃনগর, লোকাল, মেইল, কমিউটার ও স্পেশাল ট্রেন মিলিয়ে দিনে ৭৫ হাজারের মতো যাত্রী পরিবহন করতে পারব।

তিনি বলেন, কেবলমাত্র টিকিট যারা সংগ্রহ করতে পেরেছেন, আমরা তাদেরকেই যাত্রী বলব। অন্যান্য যারা, তাদের যাতায়াতের জন্য আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকিট দেব। সেগুলো মিলে যারা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন, তারাই শুধুমাত্র যাত্রী। টিকিটবিহীন কেউ যেন জোর করে তথাকথিত ট্রেনের যাত্রী হতে না পারে সবাই মিলে আমরা সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখব।

শিডিউল বিপর্যয় প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, আমাদের বেশিরভাগ ট্র্যাকই সিঙ্গেল। ট্রেনগুলোকে একটা লাইনের উপর দিয়ে যাওয়া আসা করে। ‌কোনো কারণে যদি একটি ট্রেন ১০ মিনিট দেরি করে তাহলে পুরো শিডিউলে এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া তাপমাত্রাও একটা বড় বিষয়। এখন প্রায় প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা থাকছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। একটু দেরিতে হলেও আমরা নিরাপদে যেতে চাই। আমরা সবসময় চেষ্টা করব সময় মতো যেন যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারি।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত আরও ছবিসহ মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *