শীতে কেমন আছে বাঘ সিংহ ময়ূরপঙ্খীরা

0

পৌষের শেষদিকে তীব্র শীতের পর এসেছে মাঘ মাস। কথায় আছে, ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’। অর্থাৎ শীতকে পাত্তা না দেওয়া বাঘ-সিংহও মাঘ মাসের শীতে উষ্ণতা খোঁজে। মাঘের শীত থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীদের নিরাপদ রাখতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা সাধারণ সময়ের চেয়ে তদারকি বাড়িয়েছেন। শীতে বেশি আক্রান্ত হয় পাখিরা। তাই তাদের গায়ে যেন হিমেল বাতাস না লাগে সেই ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।

কয়েকদিন আগে জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানার গাছগাছালির পাতা ও ডালের ফাঁকে আসা রোদের উষ্ণতা নিচ্ছে বেশিরভাগ প্রাণী। কোনো কোনো প্রাণী আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে। আবার কোনো কোনো প্রাণীকে দেখা গেছে একে অপরের গায়ে গা লাগিয়ে উষ্ণতা ভাগাভাগি করতে।

চিড়িয়াখানায় ঢোকার পর শুরুতেই দেখা যায় বিদেশি পাখির খাঁচা। সেখানে নিশি বককে (ব্লাক ক্রাউন্ড নাইট হিরন) দেখা গেছে এক পা তুলে জড়োসড়ো হয়ে থাকতে। তবে রোদের উষ্ণতা তাকে ঠান্ডা থেকে কিছুটা মুক্তি দিয়েছে। ওই শেডের অন্য পাখিগুলোরও একই অবস্থা।

আরেকটু দূরেই রয়েছে বাঘ ও সিংহের খাঁচা। সেখানে তাদের বিশ্রাম কক্ষে নতুন খড় দিয়ে গদি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে মাঘের শীতে বাঘ-সিংহ কাবু হয়ে না যায়। সুস্থ সবল প্রাণীগুলোকে আয়েশ করে দিনের আহার গ্রহণ করতে দেখা গেছে।

বাঘ-সিংহের পেছনে রয়েছে ইমু পাখির শেড। ইমু পাখির শেড পুরোপুরি উন্মুক্ত থাকলেও তাদের বিশ্রাম কক্ষে বাতাস থেকে রক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে পাটের চট। ইমু পাখিকে ফুরফুরে মেজাজে দর্শনার্থীদের বিনোদন দিতে দেখা গেছে।

ময়ূরের শেডে পুরো বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে পাটের চট দিয়ে। এগুলো দিনের বেলায় দর্শনার্থীদের দেখার সুবিধার জন্য উঠিয়ে রাখা হয়। আর রাতের বেলা নামিয়ে দেওয়া হয় যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। ঝলমলে রোদে কয়েকটি ময়ূরকে পাখনা মেলে বসে থাকতে দেখা গেছে।

বাঘ-সিংহের মতো শীত বা ঠান্ডাকে পাত্তা না দেওয়া জলহস্তীদেরও রোদে দলগতভাবে দাঁড়িয়ে দিনের আহার গ্রহণ করতে দেখা গেছে। সেগুলোর শরীর থেকে ঝরছিল কাদা মাখা পানি।

শীতে চিড়িয়াখানার সাপগুলোর উষ্ণতার জন্য খড়কুটো দিয়ে গদি বানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দুটি অজগর একে অপরকে জড়িয়ে এমন একটি গদিতে বসে আছে। অন্য সাপগুলোর জন্যও একই ব্যবস্থা রেখেছে কর্তৃপক্ষ। শেডের সামনে ছোট্ট একটি নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা আছে, ‘শীতকালে সাপ উষ্ণ ও নিরাপদ জায়গা খোঁজে। এসময় তারা কোনো খাবার গ্রহণ করে না।’

বানরগুলোকে চিৎপটাং হয়ে নিজ খাঁচায় শুয়ে-বসে রোদের উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। তাদের বিশ্রাম কক্ষের বাইরে ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষায় টানিয়ে দেওয়া হয়েছে পাটের চট।

মায়াবী হরিণকে মাটির ঠান্ডা থেকে নিরাপদ রাখতে শেডে থাকা বট গাছের নিচে খড় বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু হরিণকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আর কিছু হরিণকে রোদ পোহাতে দেখা গেছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকা ১৩৮ প্রজাতির দুই হাজারেরও বেশি পশু-পাখির জন্য ঠান্ডা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন নাজমুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীত যেমন মানুষকে জবুথবু করে, তেমনি প্রাণীদেরও করে। যেসব গৃহপালিত প্রাণী প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে না, তারা শীতে বেশি সংবেদনশীল। বাঘ-সিংহ শীতকে পাত্তা দেয় না। জলহস্তীর কথা চিন্তা করতে পারেন, কোন দিক দিয়ে শীত এলো না এলো সেটা তার কাছে কিছুই না। হরিণ এমন একটা প্রাণী, সে শীত বা বর্ষায় শেল্টার নেয় না। সে বর্ষা এনজয় করে। একেক প্রাণীর সহ্যক্ষমতা একেক রকম। সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল হচ্ছে পাখি। আর যেকোনো কমিউনিটির বয়স্ক প্রাণীরা প্রতিকূলতার সঙ্গে কাবু হয়ে যায়।

তিনি জানান, পশু-পাখির ইমিউনিটি বুস্টিংয়ের জন্য ভিটামিন ও মিনারেল ডিসেম্বর থেকে দেওয়া হচ্ছে। এটা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই সেলেনিয়াম, মাল্টি-ভিটামিন ইত্যাদি। এছাড়া পর্যবেক্ষণ এখন বেশি হচ্ছে। আগে দুই বার দেখা হতো, এখন তিন বার করে দেখা হয়।

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীদের মধ্যে যারা শীত সহ্য করতে পারে না তাদের জন্য শীতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। বাইরে চট এবং ভেতরে বেডিং হিসেবে খড়কুটো দিয়ে দিয়েছি। দিনের বেলা দর্শনার্থীদের জন্য কিছুটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। তারা চলে গেলে সেগুলো আবার নামিয়ে দেওয়া হবে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত আরও ছবিসহ মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *