বনশ্রী আবাসিক এলাকা : হিজড়াদের সঙ্গে চুক্তি, শর্ত ভঙ্গ করলেই ব্যবস্থা!

0
HASNAT NAYEM; DP-205

সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই খবর আসে— বিয়ে বাড়িতে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে ভাঙচুর করেছে হিজড়ারা, অবরুদ্ধ হয়েছে পরিবার। নবজাতক হওয়ার খবরে বাসায় গিয়ে চাঁদা না পেয়ে ভাঙচুর করেছে; হিজড়াদের ছিনতাই ও অবৈধ কার্যকলাপ ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্য।

এমন ঘটনা সামাজিকভাবে যেমন বিব্রত কর, তেমনি অস্বস্তিরও বটে। তাই এসব ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাড়িওয়ালা, ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া, দোকান মালিক, ব্যবসায়ী, হোটেল মালিক ও ভ্যান দোকানদারদের যেন কোনো ধরনের বিরক্ত না করে— এমন শর্তে রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ ওই এলাকার হিজড়া গ্রুপগুলোর জন্য ‘বকশিস’ নির্ধারণ করেছে বলে জানা গেছে।

যদিও এ বিষয়টি বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ ও ওই হিজড়া গ্রুপগুলোর কোনো সদস্যই স্বীকার করেননি। তবে বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হিজড়াদের অত্যাচারে তারা অতিষ্ট।

বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ সভা করে ৫টি ক্যাটাগরিতে বকশিস নির্ধারণ করেছে এমন একটি পত্র ঢাকা পোস্টের হাতে রয়েছে। ওই পত্রে বলা হয়েছে, গত ৮ জুন সোসাইটির কার্যালয়ে ওই এলাকার হিজড়াদের ৪টি গ্রুপ এবং তাদের গ্রুপ প্রধান ময়নার সঙ্গে সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বকশিস উঠানো বিষয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষের মধ্য আলোচনা শেষে শর্ত সাপেক্ষে ও নির্ধারিত হারে এলাকার বাড়ি/ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া এবং দোকাদারদের পক্ষ থেকে হিজড়াদের বকশিস দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শর্তে যা যা রয়েছে

১. কোনো হিজড়া বনশ্রী আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী বাড়িওয়ালা, ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া, দোকান মালিক, ব্যবসায়ী, হোটেল মালিক ও ভ্যান দোকানদারের কাছ থেকে সোসাইটি নির্ধারিত বকশিসের বাইরে কারো কাছ থেকে জোর করে নিজেদের ইচ্ছামতো কোনো বকশিস বা চাঁদা তুলতে পারবে না।

২. পত্রে উল্লিখিত ৪ জন হিজড়া ছাড়া অন্য কেউ বনশ্রী আবাসিক এলাকায় (এ থেকে এন-ব্লক পর্যন্ত) বকশিস তুলতে পারবে না।

৩. কাউকে কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করা, অকথ্য গালিগালাজ করা, অশালিন অঙ্গভঙ্গী প্রকাশ করা, বাজে পরিবেশ সৃষ্টি করা, হাতে তালি দেওয়া অথবা ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ কোনো প্রকার ঝগড়া-ঝাটি করতে পারবে না। এছাড়া সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না। এমন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যেসব খাতে যত টাকা নিতে পারবে হিজড়ারা

ওই পত্রে বলা হয়েছে, মানবিক দিক বিবেচনা করে খাতওয়ারি বকশিসের হার নির্ধারণ করা হলো। যদি কোন বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া, দোকানদারের কাছে নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি দাবি করেছে— এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, এই সিদ্ধান্ত সোসাইটি যেকোন সময় পরিবর্তন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।

হিজড়ারা বিয়ের অনুষ্ঠান ও কোনো পরিবারে নতুন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে সেখান থেকে ১০০০ টাকা বকশিস নিতে পারবে; শুধু রমজানে ঈদে বাড়ির মালিক থেকে ২০০ টাকা নিতে পারবে; বনশ্রী আবাসিক এলাকার দোকানদারদের থেকে শুধু রমজান ঈদে ১০০ টাকা এবং দোকান থেকে মাসে একবার (১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে) ৪০ টাকা নিতে পারবে।

বনশ্রী আবাসিক এলাকায় হিজড়াদের ৪টি গ্রুপ রয়েছে। তাদের গ্রুপ প্রধান হচ্ছে ‘ময়না’। ওই এলাকায় বকশিস তুলবেন হিরা, ফুলি, বিজলী ও রিতা হিজড়া। এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুরসুরি হিজড়াও। সবার ঠিকানা হিসেবে ‘গোড়ান হাঁড়াভাঙ্গা মোড়’ এলাকার কথা উল্লেখ আছে।

বিষয়টি জানতে গ্রুপ প্রধান ময়না হিজড়ার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সংযোগ পাওয়া যায় তালিকায় দুই নম্বরে হিরা হিজড়ার মোবাইল নম্বরে। সবকিছু শোনার পর তিনি ‘আমি জানি না’ বলে কলটি কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ বনশ্রী প্লট মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হিজড়াদের অত্যাচারে না থাকার মত অবস্থা আমাদের। আমরা কোনো ফি নির্ধারণ করিনি। আমরা কেন টাকা দেবো তাদের? তারা কি আমাদের কোনো ওয়েল উইশার, যে তাদের আমরা টাকা দেবো।

তিনি বলেন, পুলিশ কনভেনশন হলে দুই তিন থানা মিলে একটি মিটিং হয়েছিল। ওই মিটিংয়ে আমরা বলেছি, আমাদের অসুবিধার কথাগুলো। ডিসি-ওসি বলছেন, তাদের ধরে সরাসরি থানায় জানাতে এবং তারা কোর্টে চালান করে দেবে।

চিঠিতে ফি নির্ধারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আগের কাগজ। আজকে কালকের কোনো কাগজ পেয়েছেন কি না? এই কাগজের এখন আর কোনো ভিত্তি নাই। হিজড়াদের যেখানে পাওয়া সেখানে ধরে থানায় দিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্টে’ প্রকাশিত আরও ছবিসহ মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *