ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে বাস কবে চলবে কেউ জানে না

0
HASNAT NAYEM; DP-172

ঢাকা-কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক রুটে বিমানের চেয়ে কম খরচে যাত্রী সেবা দিতে ২০১৫ সালে বাস চালুর পরিকল্পনা করে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল। এজন্য একটি চুক্তিও হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের এপ্রিলে এক জোড়া ট্রায়াল বাস চালায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আটকে যায় চার দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপনের দারুণ ওই পরিকল্পনা।

মাঝে প্রায় ৬ বছর অতিবাহিত হলেও আন্তর্জাতিক রুটটিতে বাস চালানোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় এই রুটে আদৌ বাস চলবে কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে আন্তঃসীমান্ত যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল) মোটর যানবাহন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ভুটান করেনি। দেশটি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে একমত হয়নি।

বিবিআইএন সংযুক্তির আওতায় ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকার কমলাপুরের বিআরটিসি আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল থেকে এক জোড়া বাস ট্রায়াল রান হিসেবে নেপালের কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাত্রা করে। উদ্দেশ্য ছিল, বিমানের চেয়ে কম খরচে সড়কপথে নেপালে বাস সার্ভিস চালু করা।

ওই ট্রায়াল রানে ছিল শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের ২টি বাস। তৎকালীন বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ট্রায়াল রানের বাসে অংশ নেন ৪৪ জন সদস্য। এর মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ২৫ জন কর্মকর্তা, ১১ জন ভারতীয়, ৬ জন নেপালি এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের দুই প্রতিনিধি।

ট্রায়াল রানের বাসগুলো ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল সকাল ৯টায় ঢাকা ছেড়ে নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকা-কাঠমান্ডুর ১ হাজার ১০৪ কিলোমিটার সড়ক পথ বাসে পরিদর্শন করেন। সড়কে বাস চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাই, ভাড়া নির্ধারণ এবং তিন দেশের মধ্যে বাস চলাচলের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করেন তারা।

ঢাকা থেকে চারদিনের যাত্রা শেষে ২৬ এপ্রিল প্রতিনিধি দল কাঠমান্ডু পৌঁছায়। তবে নিয়মিত যাতায়াতের সময় এই পথ পাড়ি দিতে বাসে ৩০ ঘণ্টা সময় লাগবে।

এরপর ২৭ এপ্রিল এই প্রতিনিধি দল সেখানে একটি ত্রি-দেশীয় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নেপালের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন ছয় মাসের মধ্যে এই রুটে নিয়মিত বাস চালু হবে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিষয়টি ঢাকা পড়ে। আন্তর্জাতিক এ রুটে আদৌ বাস চলাচল করবে কি না, করলেও কবে নাগাদ সেটি শুরু হবে- এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়, বিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা পোস্ট। কোনো পক্ষই সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় নতুন কয়েকটি রুট নিয়ে পরিকল্পনা করছিল সরকার। এর মধ্যে রয়েছে বরিশাল-কোলকাতা, চট্টগ্রাম-কোলকাতা, ঢাকা-কাঠমান্ডু, ঢাকা-গ্যাংটক, ঢাকা-দার্জিলিং। এসব রুটের মধ্যে ঢাকা-দার্জিলিং রুটে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর বাসের ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়।

বিআরটিসি ওই সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন রুটের প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিবেচনাধীন আছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে বিআরটিসির বাস চালানোর কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) শুকদেব ঢালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা টু নেপাল আমাদের একটা ট্রায়াল রান হয়েছিল। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো তথ্য আসেনি। এখানে বিআরটিসি কোনো কাজ করবে না। পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসবে, তারপর আমরা প্রস্তুতি নেব।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কানেক্টিভিটি শাখার উপ-সচিব মো. আবু নাছের ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এ রুটে বাস কীভাবে চলবে সে বিষয়ে কিছু স্বাক্ষর হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের এই শাখার বয়স অল্প কয়েক দিন হলো কেবল।

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু দূরত্ব যত

গুগল ম্যাপের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা থেকে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর (চিকেন’স নেক) হয়ে নেপালের কাঠমান্ডু পর্যন্ত সড়ক পথের দূরত্ব ৯৬৩ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে একটি বাসের অন্তত সাড়ে ২৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।

তবে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডুর দূরত্ব সড়কপথে ১ হাজার ১০৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধার দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটার, বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাঁকরভিটা স্থলবন্দরের দূরত্ব ৫৪ কিলোমিটার, কাঁকরভিটা থেকে কাঠমান্ডুর দূরত্ব ৬০০ কিলোমিটার। পুরো সড়ক পথের মধ্যে ২২০ কিলোমিটার পাহাড়ি খাড়া রাস্তা আছে।

বিআরটিসি বর্তমানে যেসব আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করছে

বিআরটিসির ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সংস্থাটি বর্তমানে ৫টি আন্তর্জাতিক রুটে বাস পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-কোলকাতা, আগরতলা-ঢাকা-কোলকাতা, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি, ঢাকা-খুলনা-কোলকাতা এবং ঢাকা-আগরতলা।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত আরও ছবিসহ মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *